এমন কি কখনও ঘটেছে,আপনি সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখলেন বালিশের উপর কিছু চুল পড়ে রয়েছে? কিংবা, আপনার চিরুনিতে আগের চাইতে বেশি চুল দেখা যাচ্ছে? এমনটাতো কিছুদিন পরপরই হতে দেখা যায়, তাই না? চুল ঝরে পড়া সমস্যাটা নতুন কিছু নয়, আর চুল পড়ারও একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। মানুষের নিয়মিত উদ্বেগগুলোর একটি হচ্ছে এই অতিরিক্ত চুল পড়া। সমস্যাটি উত্তরণে বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হওয়ার মাত্রা গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।চুল কোষের নিজস্ব একটি জীবনচক্র আছে। এটির বৃদ্ধির পর্ব, স্থায়িত্ব ও পরবর্তী সময়ে ঝরে যাওয়া। কিন্তু কখনও কখনও সেই জীবনচক্র বিঘ্নিত হতে পারে। মানসিক চাপ, নিম্নমানের জীবনযাত্রা, সুষম খাবারের অভাব, ঠিক সময়ে না-ঘুমানো কিংবা অপর্যাপ্ত ঘুমেও চুল পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও প্রচুর ভ্রমণ চুল কোষের জীবনচক্র সমস্যা তৈরি করতে পারে। বড় একটা সময় ধরে চুল ঝরলে তাতে দীর্ঘস্থায়ী চুল খোয়াতে হবে। আর চুল ঝরা তীব্রতর হলে স্বল্প সময়ে চুল হারাতে হতে পারে। এমনটা নিয়মিত ঘটলে মাথা খালি হয়ে টাক পড়ে যাবে। ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি৩ ও লৌহ ঘাটতি কিংবা রক্তশূন্যতা, হরমোন ভারসাম্যহীনতা বা ইনসুলিন নিরোধক, পিসিওএস (পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রম, থাইরয়েড ঘাটতি কিংবা মানসিক চাপ বৃদ্ধি ও সেই সময়টা পার হওয়ার পরে, রোগাক্রান্ত হওয়া কিংবা গর্ভাবস্থার পরে) চুল ঝরে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ অবস্থা থেকে বাঁচতে পরীক্ষা করতে হবে। এ সব ঘাটতি ও ভারসাম্যহীনতা দূর করার পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মাথায় রাখতে হবে। বাদাম, খেজুর, ডুমুর, শস্যবীজ, রঙিন শাক-সবজি, সবুজ-হলুদ-কমলা-লাল রঙের একটি করে ফল খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাকতে হবে
আমাদের জেনে
বা না
জেনে এমন
কিছু ভুল
হয়ে যায়
যার কারণে
চুল ঝরে
পড়া বৃদ্ধি
পায়। দিন
দিন মাথার
চুল পাতলা
হয়ে যাচ্ছে,
ঝরে যাচ্ছে,
টাক পড়ে
যাচ্ছে—এমন
কথা অনেকের
মুখেই শোনা
যায়। চুল
পড়া, চুল
উঠে যাওয়া
বা চুল
পাতলা হয়ে
যাওয়া নিয়ে
চিন্তার অন্ত
নেই। ছেলেমেয়ে
সবাই এর
শিকার। চুল
কেরাটিন নামের
একরকম প্রোটিন
দিয়ে তৈরি
হয়। চুলে
৯৭ ভাগ
প্রোটিন ও
৩ ভাগ
পানি রয়েছে।
চুলের যেটুকু
আমরা দেখি
সেটি মৃত
কোষ। কারণ
এতে অনুভূতিশীল
কোনো কোষ
নেই। চুল
প্রতি মাসে
আধা ইঞ্চি
করে বড়
হয়। স্বাভাবিকভাবে
একটি চুল
দুই থেকে
চার বছর
পর্যন্ত বড়
হতে থাকে।
এরপর বৃদ্ধি
কমে যায়।
গ্রীষ্মকালে চুল
দ্রুত বড়
হয় কিন্তু
শীতকালে কম
বড় হয়।
একটি চুলের
গড় আয়ু
দুই-আট
বছর। সুতরাং
চুল কিছু
না কিছু
প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই
ঝরে যায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী
মেডিকেল কলেজ
ও হাসপাতালের
চর্ম ও
যৌন বিভাগের
প্রধান অধ্যাপক
রাশেদ মো.
খান বলেন,
সাধারণত খুশকি,
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন,
দুশ্চিন্তা ও
চুলে বিভিন্ন
ধরনের প্রসাধনী
ব্যবহার করার
জন্য চুল
পড়ে থাকে।
কীভাবে বুঝবেন
চুল পড়ছে?
একজন সুস্থ
মানুষের মাথায়
গড়ে এক
থেকে দেড়
লাখ চুল
থাকে। প্রতিদিন
১০০ থেকে
১৫০টা পর্যন্ত
চুল পড়া
স্বাভাবিক। কিন্তু
এর চেয়ে
বেশি পড়লে
তা অবশ্যই
উদ্বেগের কারণ।
বালিশ, তোয়ালে
বা চিরুনিতে
লেগে থাকা
চুল গুনতে
চেষ্টা করুন।
অন্তত পরপর
তিন দিন।
অথবা অল্প
এক গোছা
চুল হাতে
নিয়ে হালকা
টান দিন।
যদি গোছার
চার ভাগের
এক ভাগ
চুলই উঠে
আসে, তবে
তা চিন্তার
বিষয়।
কী কী
কারণে চুল
বেশি পড়তে
পারে?
১. অ্যান্ড্রোজেনিক
হরমোন নারীর
চুল পড়া
ও পুরুষের
টাকের সবচেয়ে
বড় কারণ।
এই হরমোন
সাধারণত পুরুষের
শরীরে বেশি
পরিমাণে থাকে।
যাদের শরীরে
এই হরমোনের
প্রভাব বেশি,
তাদেরই বেশি
করে চুল
পড়ে। নারীর
মেনোপজের সময়
ও পরে
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন
আনুপাতিক হারে
বেড়ে যায়।
তখন হঠাৎ
চুল বেশি
করে পড়তে
শুরু করে।
২. ছত্রাক
সংক্রমণ বা
খুশকি হলো
চুল পড়ার
অন্যতম কারণ।
সে ক্ষেত্রে
ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু
চুলে ব্যবহার
করতে হয়।
এর জন্য
ওষুধ খেতে
হতে পারে।
সংক্রমণ ভালো
হয়ে গেলে
চুল আবার
গজায়।
৩. শরীরের
পুষ্টির ওপর
চুলের স্বাস্থ্য
নির্ভর করে।
দৈনিক খাদ্যতালিকায়
আমিষ, শর্করা,
চর্বি, খনিজ
ও ভিটামিন
পরিমিত পরিমাণে
না থাকলে
চুল পড়ে
যায়। এ
ছাড়া শরীরে
দীর্ঘদিন কোনো
একটি উপাদানের
অভাবে চুল
পড়ে যায়।
৪. দুশ্চিন্তায়
ভুগলে বা
মানসিক সমস্যা
থাকলে স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি
চুল পড়তে
পারে। এমনকি
টাক হওয়ার
চিন্তায় নাকি
টাক হয়।
তবে এ
চুল পড়া
সাময়িক এবং
পুনরায় চুল
গজায়। তবে
দীর্ঘদিন মানসিক
দুশ্চিন্তায় থাকলে
বা দুশ্চিন্তা
কাটিয়ে উঠতে
না পারলে
অনেক বেশি
চুল পড়ে
যেতে পারে।
৫. হরমোনের
কমবেশি হওয়ার
কারণে চুল
উঠে যেতে
পারে। যেমন:
থাইরয়েড হরমোনের
মাত্রা কম
বা বেশি
হলে, গর্ভবতী
অবস্থায় এবং
বাচ্চার জন্মের
পর হরমোনাল
ভারসাম্য পরিবর্তিত
হয় বলে
তখন চুল
বেশি পড়ে।
হরমোনের এ
পরিবর্তন আবার
আগের অবস্থায়
ফিরে গেলে
পুনরায় চুল
গজায়। তবে
তা আগের
অবস্থায় যেতে
এক বছর
পর্যন্ত সময়
লাগতে পারে।
৬. ক্যানসার
চিকিৎসায় কেমোথেরাপি
দেওয়ার পর
চুল উঠে
যায়। কেমোথেরাপির
প্রথম ডোজ
দেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর
চুল পড়া
শুরু হয়
এবং কেমোর
সর্বশেষ ডোজের
তিন-চার
মাস পর
পুনরায় চুল
গজানো শুরু
হয়।
৭. চুলের
বিশেষ কোনো
স্টাইলের জন্য
যদি দীর্ঘদিন
খুব টেনে
চুল বাঁধা
হয় বা
টাইট করে
খোঁপা বা
ব্যান্ড করা
হয়, তবে
এ ধরনের
চুল পড়া
শুরু হয়।
দীর্ঘদিন এক
রকম চুল
বাঁধার কারণে
চুল পড়া
পুনরায় আগের
অবস্থায় ফিরে
যায় না।
ফলে টেনে
বাঁধার কারণে
এ চুল
পড়া স্থায়ীভাবে
চুল পড়ার
কারণ হয়ে
দাঁড়ায়। খুব
বেশি পরিমাণে
চুল রঙিন
করার প্রসাধন,
চুল সোজা
করা বা
ক্রমাগত রিবন্ডিং
করলে চুল
পড়ার হার
বেড়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে
আবার চুল
ওঠে, কিন্তু
অনেক সময়
হেয়ার ফলিকলের
(যে গ্রন্থি
থেকে চুল
হয়) স্থায়ী
ক্ষতি হয়ে
গেলে চুল
আবার নাও
গজাতে পারে।
৮.কিছু
অসুখে(যেমন:
অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড,
জন্ডিস, ম্যালেরিয়া,
ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে)
চুল পড়ে
যেতে পারে।
অনেক সময়
অসুখ ভালো
হওয়ার পরও
চুল আর
আগের অবস্থায়
ফিরে যায়
না।
৯. শরীরে
বড় কোনো
অস্ত্রোপচার বা
অপারেশনের পর
বিভিন্ন ওষুধ
প্রয়োগ, শারীরিক
পরিবর্তন অথবা
মানসিক উদ্বেগের
কারণে অনেক
সময় চুল
পড়ে যেতে
পারে। তবে
সুস্থ হওয়ার
পর চার
থেকে আট
সপ্তাহের মধ্যে
চুল আগের
অবস্থায় ফিরে
যায়।
১০. কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চুল পড়তে পারে, যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, প্রেসারের ওষুধ, রক্ত তরলীকরণের ওষুধ, হরমোন, মানসিক অসুস্থতার ওষুধ ইত্যাদি।
১১. আমাদের মাথায় যত চুল আছে তার সবগুলোরই কিন্তু গ্রোথ হয় না। প্রায় ৯০% এর মতো চুলের গ্রোথ হয় আর বাকি ১০% এর মতো চুল রেস্টিং ফেজ বা বিশ্রামে থাকে। এই চুলগুলোই সাধারণত ঝরে যায়। তবে এর জায়গায় আবার নতুন চুল গজায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, প্রতিদিন ১০০টির মতো চুল পড়াটা স্বাভাবিক। আপনার চুল যদি ১০০টিরও বেশি ঝরতে থাকে তার মানে আপনার ১০% এর বেশি চুল রেস্টিং ফেজে চলে গিয়েছে। এর কারণ হতে পারে খাদ্য, জীবনধারা, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ ইত্যাদির কারণে। এমনটা যদি হয় তাহলে আপনার একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ট্রিকলোজিস্ট (Trichologist)-এর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
১২. খাদ্যাভ্যাসের
উপর চুলের
স্বাস্থ্য অনেকটা
প্রভাবিত। আপনার
খাদ্যাভ্যাস শুধুমাত্র
আপনার ওজন
এবং সাধারণ
স্বাস্থ্য ভালো
রাখার জন্যই
নয় কিন্তু!
এটি আপনার
চুলের উপরেও
রাজত্ব করে
থাকে। ভিটামিনের
ঘাটতি এবং
পুষ্টির অভাবে
আপনার চুল
পড়ে যেতে
পারে বহুগুণে।
চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত
খাবার এবং
রিফাইন্ড করা
খাবার অতিরিক্ত
পরিমাণে খাওয়ার
ফলে আপনার
চুল ও
ঝরে যেতে
পারে অতিরিক্ত
পরিমানেই। তাই
হেয়ার লক
করার জন্য
আজই আপনার
ডায়েটে যোগ
করুন প্রচুর
প্রোটিন, ওমেগা
৩, ভিটামিন
এবং খনিজ
পদার্থসমৃদ্ধ খাবারসমূহ।
এইসব খাবার
আপনার চুলকে
করবে স্ট্রং
ও সিল্কি।
১৩. সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি (UV) রশ্মি শুধুমাত্র আপনার ত্বকের ক্ষতিই করে না বরং এটি চুলেরও সমানভাবে ক্ষতি করে থাকে। ইউভি রে আপনার চুলকে ভঙ্গুর, দুর্বল এবং শুষ্ক করে দেয় যার কারণে চুল পড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাই এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে চেষ্টা করুন সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে থেকে। এছাড়া ব্যবহার করুন হ্যাট বা স্কার্ফ এবং ছাতাতো অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
১৪. চুল ঝরে পরার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো চুলে সঠিক পণ্য ব্যবহার না করা। ত্বকের মতো চুলেরও আলাদা আলাদা ধরন থাকে। যদি আপনার চুল শুষ্ক হয় আর আপনি ব্যবহার করেন এমন একটি শ্যাম্পু যা তৈলাক্ত চুলের জন্য তাহলে তো সমস্যা হবেই। তাই চেষ্টা করুন মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করারএবং ভালো ফলাফল পেতে চেষ্টা করুন তেল ও শ্যাম্পু কেনার আগে তাতে কী কী উপাদান আছে তা দেখে নেয়ার। আরো ভালো ফলাফলের জন্য একই লাইন থেকে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারগুলো ব্যবহার করুন। এগুলো একই উপাদান দিয়ে তৈরি এবং একে অপরের পরিপূরক।
১৫. কিছুদিন পর পরই চুল কালার করা অথবা চুলে অধিক পরিমাণে কেমিক্যালস ব্যবহার করা চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ। আরো একটি কারণ হলো চুল সবসময় হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকানো এবং স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা। এগুলো আপনার চুলকে ভঙ্গুর করে তোলে।
আর তাই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার সময় এর কুলিং সুইচটা অন করে নেবেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ফ্যানের বাতাসে চুল শুকাতে পারেন, কারণ এতে আপনার চুল ভালো থাকবে। আর স্ট্রেইটনার ব্যবহারটা খেয়াল রাখবেন চুলে যেন সরাসরি না হয় এবং চুলে হিট প্রটেক্টিভ কিছু লাগানো যেন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
১৬. হাই পনিটেইল বা খোঁপা দেখতে সুন্দর লাগলেও দীর্ঘক্ষণ বেধে রাখার ফলে আপনার চুলের গোড়া আলগা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় আর এতে চুল পড়ার হারও বেড়ে যায়। তাই একই হেয়ারস্টাইল প্রতিদিন না করে চেইঞ্জ করে বাধার চেষ্টা করুন এবং চুলে ঝুটি, খোঁপা ইত্যাদি করার সময় হালকাভাবে বাধার চেষ্টা করুন।
১৭. বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও চুল ঝরতে পারে। যদি আপনি কিছুদিনের মধ্যে অ্যান্টি-বায়োটিকের একটি নির্ধারিত কোর্স কমপ্লিট করে থাকেন অথবা গত কয়েক মাসের মধ্যে কোন ধরনের সার্জারি করে থাকেন তাহলে এগুলোর প্রভাবে আপনার চুল ঝরতে পারে। এটা সম্ভব যে কোন সার্জারির ফলে আপনার শরীরের উপর দিয়ে খুব ধকল গেছে বা যাচ্ছে তাহলে এটি হতে পারে চুল পরার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি। তাই এই ধরনের কিছু হয়ে থাকলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং খাবারে বেশি পরিমাণে প্রোটিন যোগ করুন।
১৮. আমাদের অনেকেরই এই অভ্যাসটা আছে যে গোসল সেরে এসে ভেজা চুল আঁচড়ে নেয়া। কিন্তু এটা ঠিক নয় কারণ ভেজা চুল শুষ্ক চুলের চেয়ে অনেক বেশি বিচ্ছেদ প্রবণ। অল্প আঘাতেই গোড়া থেকে উঠে চলে আসে ভেজা চুল কারণ তখন চুলের গোড়া নরম থাকে।
তাই চুলের ভেজা অবস্থায় হাতের আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে জটগুলো যতটা সম্ভব ছাড়িয়ে নিন এবং নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে চুল গুলো শুকিয়ে নিন। চুল পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর চুল আঁচড়াবেন, তার আগে নয়।
চুল ঝরে যাওয়ার কারণগুলোতো দেখে নিলেন, আসলে এগুলো আমরা সবাই কমবেশি জানি কিন্তু সেভাবে পাত্তা দেই না বা জেনেও ইচ্ছেমতো চুলের উপর অত্যাচার করি। কিন্তু যখন চুল ঝরে যেতে যেতে পাতলা হয়ে যায় অথবা অতিরিক্ত চুল পড়া শুরু হয় তখন আমাদের টনক নড়ে। যাই হোক এই ভুলগুলো যাতে আর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত কারণ চুলের সৌন্দর্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে আপাদমস্তক সৌন্দর্য।
১৯. টাক পড়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণও থাকতে পারে।
প্রতিরোধ
* পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করুন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন ও প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুমান গবেষণায় দেখা গেছে তাদের ত্বক ও চুলের লাবণ্যতা বেশি।
* চুল খুশকিমুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। চুলের সতেজতায় নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা, চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পুর ব্যবহার প্রয়োজন।
* দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। অসময়ে চুল পাকার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে দুশ্চিন্তা। তাই চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার। বাড়তি চাপ যতটা এড়ানো যায়, ততই মঙ্গল। মনে রাখবেন, যত বেশি চাপ নেবেন, তত বাড়বে চুল পাকার আশঙ্কা।
* বয়সের সঙ্গে চুলের রং পরিবর্তন হয়, এটা মেনে নিতে হবে। কলপ, কৃত্রিম রং যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
* কোঁকড়া চুল সোজা করার চেষ্টা না করাই ভালো। প্রয়োজনে রাসায়নিকের পরিবর্তে রোলার ব্যবহার করুন।
* টেনে চুল বাঁধা ঠিক নয়। আস্তে চুল আঁচড়াবেন এবং ভেজা চুল বেশি আঁচড়াবেন না। নরম থাকতে চুল ঠিক করুন। ব্রাশের চেয়ে দাঁতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করা ভালো।
* চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
* যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
*একইভাবে ঘুমও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সময়টা– যখন শরীর সেরে ওঠে ও আরোগ্য লাভ করে। রক্তসঞ্চালন বাড়াতে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। এতে প্রতিটি কোষ সমানভাবে অক্সিজেন পাবে।
সুষম খাবারঃ
আমলকী
আমলকী চুলের
টনিক হিসেবে
কাজ করে
এবং চুলের
পরিচর্যার ক্ষেত্রে
এটি একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
এটি কেবল
চুলের গোড়া
মজবুত করে
তাই নয়,
চুলের বৃদ্ধিতেও
সাহায্য করে।
এটি চুলের
খুশকির সমস্যা
দূর করে
ও চুল
পাকা প্রতিরোধ
করে।
কুমড়ো
কুমড়োর মধ্যে
আছে জিঙ্ক।
যা স্ক্যাল্পের
চুলকানি, জ্বালা
ও নানা
রকমের সংক্রমণ
রোধ করে।
এই তেল
মাথায় মাখলে
সেটি স্ক্যাল্পে
ডিএইচটি হরমোনের
নিঃসরণ বাড়িয়ে
দেয়। এই
হরমোন হেয়ার
ফলিকলের অতিরিক্ত
প্রোটিন শোষণ
বন্ধ করে
চুল পড়া
প্রতিরোধ করে।
শাক
শাকে আছে
প্রচুর ফলিক
এসিড, যা
শরীরে মেলানিনের
অভাব দূর
করে। নিয়মিত
শাক, মেথি,
মটরশুঁটি চুল
পাকতে বাধা
দেয়।
ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে
আছে প্রচুর
পরিমাণ বি১২
ভিটামিন। চুলের
স্বাস্থ্য রক্ষা
ও বৃদ্ধিতে
বড় ভূমিকা
রাখে ভিটামিন
বি১২। অন্য
কোনো স্বাস্থ্যগত
সমস্যা না
থাকলে চুল
পাকা রোধে
ডিমের কুসুম
হতে পারে
ভালো সমাধান।
দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুধের তৈরি যেকোনো খাবার, যেমন ছানা, পায়েশ কিংবা এক গ্লাস খাঁটি দুধ কমিয়ে দিতে পারে আপনার চুল পাকার আশঙ্কা। দুধে থাকা ভিটামিনগুলো চুল যেমন শক্ত করে, তেমনি পাকার হাত থেকে সুরক্ষাও দেয়।
জিংকসমৃদ্ধ খাবার
প্রকৃতিতে পাওয়া জিংকসমৃদ্ধ খাবার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে কুমড়া, তরমুজ জাতীয় খাবারে প্রচুর জিংক থাকে। চুল কালো রাখতে বেশ উপকারী জিংকসমৃদ্ধ খাবার।
কপারসমৃদ্ধ খাবার
সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছ, তিল, গম, গরু ও খাসির মাংসে আছে প্রচুর পরিমাণে কপার। এই কপার শরীরের মেলানিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই অকালে চুল পাকা রোধ করতে কপারসমৃদ্ধ খাবার খান।
ওপরের সমস্যাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিরোধের সঠিক উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা সহজেই চুল পড়া রোধ করতে পারি। এতে কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
চিকিৎসা
বেশির ভাগ
চিকিৎসায় কিছুটা
উন্নতি হলেও
একেবারে আগের
অবস্থায় ফিরিয়ে
আনা সম্ভব
নয়। ২-৫ শতাংশ মিনস্কিডিল
ব্যবহার করে
বেশ উপকার
পাওয়া যায়।
ইদানীং চুল
প্রতিস্থাপন করা
হয়, কিন্তু
এটি ব্যয়বহুল।
লেখক: চিকিৎসক
0 Comments